মে ১৩, ২০২৫
ফেসবুকের ‘হা হা’ রিয়েক্ট: মানসিক ব্যাধির নতুন উপসর্গ?
ফেসবুকের বহুল ব্যবহৃত 'হা হা' রিয়েক্ট এখন আর শুধু মজার বা হাসির প্রতিক্রিয়া নয়—এটি ক্রমেই রূপ নিচ্ছে একধরনের অনলাইন নিষ্ঠুরতা ও মানসিক অসুস্থতার ইঙ্গিতে।
একসময় এই রিয়েক্টটি ব্যবহৃত হতো মজা বা হাস্যরসের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। কিন্তু আজকাল দেখা যাচ্ছে, ভিন্নমত পোষণ করলেই হা হা, কোনো দেশে যুদ্ধ শুরু হলে হা হা, কেউ বিপদে পড়লে হা হা, এমনকি মৃত্যুর খবরেও হা হা রিয়েক্ট দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনও নজির পাওয়া গেছে, যেখানে হা হা রিয়েক্টকে কেন্দ্র করে অনলাইন হেনস্তা থেকে শুরু করে বাস্তব জীবনের হানাহানির ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরও ভয়ানক রূপ নিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি বা বিরোধী মতাবলম্বীদের কেউ যদি কোনো মত প্রকাশ করে, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় হা হা রিয়েক্টের স্রোত। হাজার হাজার হা হা রিয়েক্ট যেন যুদ্ধের অস্ত্র হয়ে উঠেছে। এটি যেন আর মতভেদের বিষয় নয়—বরং একে অপরকে হেয় ও মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করার একটি পরিকল্পিত কৌশল।
এই আচরণ কি একজন সুস্থ ও বিবেচনাপ্রসূত মানুষের হতে পারে? কেউ বিপদে আছে, কষ্টে আছে, বা কেউ মৃত্যুবরণ করেছে—এমন পরিস্থিতিতেও যারা হা হা রিয়েক্ট দেন, তারা কি মানুষের মৌলিক মানবিক অনুভূতিগুলো হারিয়ে ফেলছেন?
এই অসহিষ্ণুতা, এই ঠাট্টার মোড়কে ঘৃণা ছড়ানোর প্রবণতা এখনই থামাতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে কাউকে অপমান করার লাইসেন্স নয়।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষের উচিত এখনই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। প্রয়োজনে ‘হা হা’ রিয়েক্টের সীমিত ব্যবহার অথবা বিতর্কিত পোস্টে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। না হলে এই নিরীহ প্রতিক্রিয়াই সমাজে বিভাজনের বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে।
আমরা নিজের আচরণে এবং অন্যকে প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে যত্নবান হই। তা না হলে ডিজিটাল ‘হা হা’ কখনো কখনো বাস্তব জীবনে ‘আহা’র কারণ হয়ে উঠবে।